শাবিপ্রবিতে উপাচার্য পদত্যাগের আন্দোলন
নানা কর্মসূচিতে চলছে শিক্ষার্থীদের আন্দোলন

শাদমান শাবাব, শাবি || উপাচার্য অধ্যাপক ফরিদ উদ্দিন আহমেদ পদত্যাগের আগ পর্যন্ত শাহজালাল বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের (শাবিপ্রবি) শিক্ষার্থীদের চলমান আন্দোলন অব্যাহত রয়েছে।
সাংস্কৃতিক আয়োজন, গ্রাফিতি অঙ্কন, টং-দোকান পুনঃস্থাপনসহ নানান কর্মকান্ডে ক্যাম্পাসকে সরব রাখছেন আন্দোলনরতরা।
টং দোকান পুনঃস্থাপন
আন্দোলন কর্মসূচির অংশ হিসেবে বিশ্ববিদ্যালয় ক্যাম্পাসে পুনরায় টং-দোকান স্থাপনের কাজ শুরু করেছে শাবিপ্রবি’র শিক্ষার্থীরা। শনিবার (২৯ জানুয়ারি) ক্যাম্পাস ঘুরে দেখা যায়, ‘চাষাভুষার টং’ নামে শিক্ষাভবন–বি ও ই এর সামনে দুইটি টং পুনঃস্থাপনের প্রস্তুতি নিচ্ছেন শিক্ষার্থীরা। এভাবে ক্যাম্পাসে পাঁচটি টং দোকান চালু করা হবে বলে জানান তারা।
আন্দোলনরত একজন শিক্ষার্থী জানান, টং দোকানে শিক্ষার্থীরা বিভিন্ন সাংস্কৃতিক ও বুদ্ধিবৃত্তির চর্চা করতো। কিন্তু শাবির ৩য় সমাবর্তনের সময় একাডেমিক ভবন বি সংলগ্ন রাস্তার পাশের টংগুলো উঠিয়ে দেওয়া হয়েছিলো। গত বছর করোনায় ক্যাম্পাস বন্ধ থাকার মাঝে শিক্ষাভবন সি এবং ই সামনে টংগুলো বন্ধ হয়ে যায়। তাই এই আন্দোলনে কর্মসূচির অংশ হিসেবে আমরা ক্যাম্পাসে পাঁচটি টং চালু করার উদ্যোগ নিয়েছি।
সাংস্কৃতিক আয়োজন
আন্দোলনের অংশ হিসেবে গত কয়েক দিন ধরে বিশ্ববিদ্যালয়ের গোলচত্বরে প্রতিবাদী গানের আয়োজন করছে আন্দোলনরত শিক্ষার্থীরা। রাত বাড়ার সংগে সংগে জমতে শুরু করে তাদের গানের আসর।
শনিবার (২৯ জানুয়ারি) রাতেও গোলচত্বরে প্রতিবাদী গানের কনসার্টের আয়োজন করা হবে বলে জানান তারা। উক্ত কনসার্টে বিশ্ববিদ্যালয়ের বিভিন্ন সাংস্কৃতিক সংগঠনের সদস্যরা গান পরিবেশন করবে বলে জানা গেছে।
এর আগে গতকাল শুক্রবার (২৮ তারিখ) সন্ধ্যা রাতে গোলচত্বরে সত্যজিৎ রায়ের ‘হিরক রাজার দেশে’ চলচ্চিত্র প্রদর্শনের আয়োজন করে চোখ ফিল্ম সোসাইটিজ। সংগঠনটির সভাপতি ফাহিম আল হৃদয় জানান, শিল্প এবং সাহিত্য যে কোনো আন্দোলনের অংশ হতে পারে। সেই জায়গা থেকে এই আয়োজন৷
পরিষ্কার–পরিচ্ছন্নতা অভিযান
উপাচার্য অধ্যাপক ফরিদ উদ্দিন আহমেদের পদত্যাগ দাবিতে চলমান আন্দোলনের কর্মসূচি হিসেবে আজ শনিবার (২৯ জানুয়ারি) বিকেলে ক্যাম্পাসে পরিষ্কার–পরিচ্ছন্নতা অভিযান চালিয়েছে আন্দোলনরত শিক্ষার্থীরা। ২০ জনেরও অধিক শিক্ষার্থী এই কর্মসূচিতে অংশ নেয়৷ এসময় তারা গোলচত্বর, ফুডকোর্টসহ বিভিন্ন একাডেমিক শিক্ষাভবনের আশপাশের ময়লা-আবর্জনা পরিষ্কার করেন।
চলমান আন্দোলনের সার্বিক বিষয়ে আন্দোলনরত শিক্ষার্থী শাহরিয়ার আবেদিন বলেন, সরকারের উচ্চ পর্যায় থেকে আমাদের জন্য বার্তা নিয়ে জাফর ইকবাল স্যার এবং ইয়াসমিন হক ম্যাম ক্যাম্পাসে এসেছিলেন। আমাদের দাবি মেনে নেওয়া হবে –তাঁদের দেওয়া এই আশ্বাসে আমরা অনশন থেকে সরে এসেছি। তবে উপাচার্যের পদত্যাগের আগ পর্যন্ত সাংস্কৃতিক আয়োজন, গ্রাফিতি ইত্যাদি বিভিন্ন কর্মসূচির মধ্য দিয়ে আমাদের আন্দোলন চলমান থাকবে।
চলতি মাসের ১৩ জানুয়ারি বিশ্ববিদ্যালয়টির বেগম সিরাজুন্নেসা চৌধুরী হলের প্রাধ্যক্ষের বিরুদ্ধে অসদাচরণের অভিযোগ তুলে তিন দফা দাবিতে আন্দোলন শুরু করেন ছাত্রীরা। একপর্যায়ে আন্দোলনরত শিক্ষার্থীদের ওপর ছাত্রলীগ হামলা চালায়।
পুলিশ শিক্ষার্থীদের লাঠিপেটা করে এবং তাঁদের লক্ষ্য করে গুলি ও সাউন্ড গ্রেনেড ছোড়ে। পরে এ আন্দোলন উপাচার্য ফরিদ উদ্দিন আহমেদের পদত্যাগের এক দফা দাবিতে রূপ নেয়। ঢানা আটদিন আমরণ অনশনে থাকেন ২৪ জনের বেশী শিক্ষার্থী।